RH

১৯ অক্টোবর ২০২২

সূরা ফাতিহা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।

ফাতিহাতুল কিতাব, উম্মূল কিতাব, সাবয়ে মাছানী, হামদ, মুনাজাত, তা'লীমুল মাছআলাহ, ফাতিহাতুল কুরআন, উম্মুল কুরআন, কুরআনে আজিম এসকল নামে ফাতিহা শব্দের বাংলা অর্থ সূচনা, ভূমিকা। এ সূরার মাধ্যমে পবিত্র কুরআন শুরু করা হয়েছে তাই নাম রাখা হয়েছে ফাতিহা।

সূরার বিষয় বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতেই নামকরণ করা হয়েছে সূরা আল ফাতিহা। কেননা যদ্বারা কোন বিষয় বা কোন গ্রন্থ বা কোন কাজ আরম্ভ করা হয়, আরবী পরিভাষায় তাকেই 'ফাতিহা' বলা হয়।

আল- কুরআনুল করীম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর বাণী সম্বলিত সন্দেহ মুক্ত একখানা আরবী ভাষার আসমানী কিতাব।

আসমানী ১০৪ খানা সহীফা ও কিতাবের মধ্যে আল- কুরআনুল হাকীম সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব। 

আল- কুরআনুল করীম লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আছে।

হযরত নবী করিম মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছে সুদীর্ঘ তেইশ বছরে ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ)- এর মাধ্যমে প্রয়োজন মোতাবেক এই কিতাব অবতীর্ণ করা হয়।

যখন অহী অবতীর্ণ হত, তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্মৃতিতে সেটা মুখস্থ করে রাখতেন এবং সম্মানিত কাতেবে অহী বা অহী লিখকগণকে ডেকে এনে তা লিখে রাখার নির্দেশ প্রদান করতেন। 

এ ছাড়াও সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুম আজমাঈন হযরত মূহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছ থেকে তা শুনে তাদের স্মৃতিতে মুখস্থ করে রাখতেন।

হযরত মহানবী সাল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর ওফাতের পর প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)- এর খিলাফত আমলে বিখ্যাত "ইয়ামামার" যুদ্ধে যখন বহু সংখ্যক হাফেজে কোরআন সাহাবী শাহাদত বরণ করলেন, তখন আল- কোরআনুল করীম মুখস্থ থাকার প্রচলিত প্রথা বিলুপ্ত হবার প্রবল আশংকা দেখা দিল এই কারণে হযরত আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) গণ্যমান্য সাহাবীগণের পরামর্শ মোতাবেক সর্বপ্রথম আল- কুরআনুল হাকীম গ্রন্থাকারে সংকলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক অহী লেখক যায়েদ ইবনে সাবেত (রাঃ)- কে কমিটি প্রধান করে কোরআন সংকলনের দায়িত্ব ভার তাকেই প্রদান করা হয়। তিনি অন্যান্য হাফেজে কোরআন সাহাবাগণ ও বিভিন্ন উপাদানের উপর লিখিত অংশ গুলো পরস্পর মিলিয়ে সংকলন আকারে তা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)- এর হাতে অর্পণ করেন।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এই সংকলন কপি হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর কাছে জমা রাখেন। 

দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) শাহাদাতের পূর্বে তিনি সেই সংকলন কপিটি তাঁর কন্যা উম্মূল মু'মেনীন হযরত হাফসা (রাঃ)- এর কাছে জমা রেখে যান।

তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রাঃ)- এর খিলাফত আমলে যখন ইসলামী সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করতে থাকে, তখন আরবের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক উচ্চারণে অনেকেই আল- কুরআনুল করীম তেলাওয়াত করতে শুরু করেন এবং এতে কোরআনের অর্থের বিকৃতির আশংকা দেখা দেয়। এরই ফলশ্রুতিতে হযরত হুযাইফা (রাঃ)- এর পরামর্শ মোতাবেক হযরত উসমান (রাঃ) রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে আল- কুরআনুল হাকীম প্রেরণের জন্যে হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত (রাঃ) কে আবার এক কপি সংকলনের দায়িত্বভার অর্পণ করেন।

হযরত ইবনে সাবেত (রাঃ) ছয়টি কপি সংকলন করেন এর একটি কপি তাশখন্দের যাদুঘরে আর একটি বৃটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে এবং একটি ফটোকপি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। অদ্যাবধী সেই সংকলন- ধারা বহমান আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে -ইনশাআল্লাহ।

'নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি, আর আমি নিজেই এর রক্ষক' -সূরা আল হিজর ১৫- ০৯।

'আল্লাহ অবতীর্ণ করিয়াছেন উত্তম বাণী সম্বলিত কিতাব যাহা সুসমঞ্জস এবং যাহা পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করা হয়' -সূরা আযযুমার ৩৯- ২৩।

'আরবী ভাষায় এই কোরআন বক্রতামুক্ত, যাহাতে মানুষ সাবধানতা অবলম্বন করে' -সূরা আযযুমার ৩৯- ২৮।

সূরা আল হিজর ১৫- ৮৭