RH

২৯ ডিসেম্বর ২০১৯

এলকোহল

এলকোহল বলতে সুরাসার বা পরিস্কার বাংলায় কোহল বলতে ইথাইল অ্যালকোহল কে বুঝায়। শোধিত কোহল বা অশোধিত কোহল বাংলাদেশে সাধারণত চিনিকলের আখের রস থেকে চিনি তৈরির পর আখের গরম রসের যে অংশকে চিটাগুড় বা মলাসেস বলা হয় তা থেকে তৈরি করা হয়। চিটাগুড়, তামাকজাত দ্রব্যে,রড মিলে এবং গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এ দেশে চিটাগুড় থেকে এলকোহল তৈরির কারখানা হাতে গোনা কয়েকটি আংগুলে হিসেব করলে এক আংগুলে তিন দাগের তিনটি। বাংলাদেশে চিনিকলের সংখ্যা এ দেশের মানুষের দৈনিক খাদ্য তালিকায় চিনির পরিমানের তুলনায় অনেক কম তাই প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে তা আমদানি করতে হয়। এ দেশের চিনিকল গুলো দেশের কৃষকের ক্ষেতের আখের উপর নির্ভরশীল। শীতের মৌসুমে চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু হয় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষকের সহায়তায়। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা শহর পঞ্চগড়ে একটি চিনিকল রয়েছে যা পঞ্চগড় চিনিকল নামে পরিচিত। পঞ্চগড় চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু হয়েছে ২০১৯ ডিসেম্বর মাসে। চিনিকলের পাশেই রয়েছে কোহল তৈরির কারখানা যা ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত।

দেশের বিভিন্ন চিনিকলের চিটাগুড় সংগ্রহ করে ট্যাংকে  রেখে সেখান থেকে ম্যাজারিং ট্যাংকে নিয়ে সেখান থেকে ডায়ালেশন ট্যাংকে নিয়ে চিটাগুড়ের ডেনসিটি বা ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে তাতে  পানি মিশিয়ে উত্তপ্ত করে ( বা না করে) ফারমেন্টেশন ট্যাংকে নেওয়া হয়। চিটাগুড়ে প্রায় ৩০% চিনি ও ৩২% ইনভার্ট চিনি থাকে। গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজের সম আনবিক মিশ্রণের নাম ইনভার্ট চিনি। চিটাগুড়ের সাথে পানি মিশিয়ে সহনীয় তাপমাত্রায় ৪৮-৪৫ ডেনসিটিতে তা ফারমেন্টশন প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয় এবং তাতে ল্যাবরেটরিতে কালচারকৃত ঈষ্ট দেওয়া হয় ফারমন্টেশন এর জন্য। ঈষ্ট অত্যন্ত নাজুক তাই ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় এর খুব যত্ন নেওয়া হয় এবং বিভিন্ন ঔষধ ও তাদের টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন  ব্যবস্থাও নেওয়া হয় প্রতি ঘন্টায় ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে হয় অনুবিক্ষণ যন্ত্রের স্লাইড এর বিভিন্ন দাগে মিলিয়নের ছকে। ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় ড্রাই ঈষ্টও ব্যবহার করা হয় জরুরী প্রয়োজনে রিয়েক্টর,মাদার ভেটে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে। ঈষ্ট থেকে জাইমেস ও ইনভার্টেস নামক দুই প্রকার এনজাইম নিঃসৃত হয়। ইনভার্টেস চিনিকে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজে রুপান্তরিত করে এবং উহারা জাইমেস এনজাইমের প্রভাবে চোলাইকৃত হয়ে ইথাইল অ্যালকোহলে পরিনত হয়। চিটাগুড় ও ঈষ্টের এ অবস্থা কে ম্যাশ বলা হয়। ম্যাশ এর পরবর্তী অবস্থাই কোহল,সুরাসার বা এলকোহল। ম্যাশ থেকে মোহনীয় গন্ধ বের হয় এই ম্যাশকে পাম্পের সাহায্যে পাম্প করে পাতন প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয় এলকোহল এর বাষ্পিয় তাপে বাষ্পিয়ভুত করে এবং পরবর্তীতে তা কুলিং বা ঠান্ডা করে শোধিত বা অশোধিত কোহল রুপে সংরক্ষিত করা হয় নির্ধারিত ট্যাংকে। এলকোহল ডিষ্টিলেশন প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে কাজ করতে হয় তা না হলে কোহলের মিষ্টি গন্ধ হারায় লো-ফূজাল অয়েল এর গন্ধ পাওয়া যায় এলকোহল এর মধ্যে।