শাড়ি- সেলাই বিহীন তাঁতে তৈরি বস্ত্র/ স্ত্রী লোকের বস্ত্র বিশেষ।
তাঁত- বস্ত্র বোনার যন্ত্র।
বস্ত্র- পরিধেয় কাপড়, আচ্ছাদন।
কাপড়- বস্ত্র, শাড়ি-লুঙ্গি, গামছা ইত্যাদি।
লুঙ্গি- পুরুষদের নিত্য ব্যবহার্য আরামদায়ক পোশাক।
তহবন্দ- লুঙ্গি জাতিয় সেলাই বিহীন বয়স্ক মানুষের পোশাক।
গামছা- শরীর মোছবার জন্য তাঁতে তৈরি এক প্রকার কাপড়।
বাংলাদেশ ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম বস্ত্র শিল্প কেন্দ্র। বস্ত্র শিল্পে বাংলাদেশের বুনিয়াদ বেশ শক্ত।
এসব কাপড় তৈরি হতো-ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও, মানিকগঞ্জ,নরসিংদী, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল,যশোর, পাবনা, কুষ্টিয়া,রাজশাহী, ময়মনসিংহ, নাটোর, লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে।
ঢাকার মসলীন, রাজশাহীর সিল্ক, জামদানি,কাতান শাড়ীর জগতে বিখ্যাত কিছু নাম।
তাঁতী- যিনি কাপড় তৈরি করেন।
পঞ্চগড়- মীরগড় তাঁতীপাড়া/মোমিন পাড়া। যেখানে তাঁত দিয়ে কাপড় বানানো হতো নিজেদের এবং অন্য মানুষের পরিধেয়ের জন্য।
তাঁতে কাপড় বানানো একজনের পক্ষে সম্ভব কিন্তু কাপড় তৈরীর অন্যান্য সরঞ্জামাদি জোগাড় করা এক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতা লাগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রঙের তারপর সেই সুতা চরকিতে ঘুরানো হয় ববীনে,ববীন থেকে মাক্কুতে বা যে প্রকার কাপড় বানানো হবে তার জন্য তাঁতে সুতা তোলা একাজটা হিসেব করে করতে হয় সুতার হিসাব সানার হিসাব নকশার হিসাব তাঁতে বসে পায়ের উপর-নীচ অনেকটা মোটরগাড়ির ব্রেক আর স্পীড মিটারের মতো গাড়ীর স্টিয়ারিং যেভাবে ঘুড়াতে হয় তাঁতেও অনেকটা সেভাবে টানতে হয় নিজের দিকে একটু ডানে-বামে। আমি গাড়ি চালিয়েছি তাঁতও চালিয়েছি।
ছোট তাঁত এ তাঁত মাটিতে একটু গর্ত খুঁড়ে বসানো হয়। কাপড় বুনন হয় বিক্রি হয় সুতা নিয়ে আসতে হয় দিনাজপুর-রংপুর থেকে। সব বিবেচনা করে একটু বড় করে উপরে'বিছমিল্লাহ ইউভিং ফেক্টরী'নামে একটি কারখানা দেওয়া হলো বাইরে থেকে কারিগর নিয়ে আসা হলো চললো ভালো কিছুদিন তারপর আস্তে আস্তে সব গেলো কারখানা গেল তাঁত মাটিতে খেলো ব্যাংক অনেক জমি খেলো উপায় কি বোঝা নিয়ে তো বেশি ক্ষণ/দিন বেড়ানো যায় না তাই বাপ বেঁচে থাকতে সন্তান গেল বৃদ্ধ তাঁতি তাকিয়ে রইল,আছে বেঁচে আমার নানা আলহাজ্ব আব্দুল কালাম আজাদ জোত দাঁড়িয়ে বাসার সামনে পুয়ালের পুন্জিহীন।
্
এখন উন্নত প্রযুক্তির যুগ ময়দান দিঘির ও নতুন হাটের হাতে বানানো চটের ব্যাগ কি আর এখন চলে। কিছুদিন চললো পলিথিন ব্যাগ তারপর যখন বুঝাগেল ক্ষতির পরিমাণ কি? চট/কাপড়ের ব্যাগে জ্বী। কিছু অসাধু মানুষ ও উন্নত প্রযুক্তি খুদ্র তাঁতীদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াল।
হাতে বানানো চটের ব্যাগ মজবুত ও টেকসই তাই দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে একটু কালো হয়ে যায় যাক ক্ষতি কি তেমনি নিজেদের বানানো কাপড় খদ্দর একটু মোটা সেলাই বিহীন তাঁতের শাড়ি, তহবন্দ হালকা গামছার চাহিদা খেদ্দেরের এখনও আছে উচ্চ মূল্যে।
কাপড় শিল্পে বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি রোবটিকস ব্যবহার করা হচ্ছে আমার কাছে মতামত চাওয়া হচ্ছে এতে কি গার্মেন্টন্স শিল্পে তোমাদের দেশে কোন প্রভাব পড়বে বলি না একটু নিচে নজর দাও মাটিতে খটখটি খটিতে বানিজ্য স্থানে অনেক মানুষ সবাই কাজ পারেনা, কারিগর আমাদের-তোমাদের প্রয়োজনে আমাদের বানিজ্য ইতিহাস সমৃদ্ধ।
সুতার ড্রামের একপ্যাচে বারো হাত শাড়ীর চরকা/চরখির সম্মিলিত ঘর ঘর শব্দে শারীর জমিনের অপরুপ গঠন মানিয়ে তোলে কারিগরের দু-পাড়ের শাড়ীর উল্টো প্যাঁচের,আঁচলের মনোরম কারুকাজ। কখনো দুই কখনো চার সানার রঙিন সুতার কাজ। কাছে টানে ভিতরের আংশিক এক পাড়ের উপরের তাঁতি বাড়ির মুরব্বিদের চরকা কাটার শ্রমের বিনিময়ে অন্য পাড়ের মায়েদের ঘোমটায় সেলামীর চাঁদ মুখ আপনার নিজেদের সকলের। ্
শরীর আংশিক কেটে গেলে আপনার নিজের মুখের লালা লাগিয়ে দিতে হয় জোড়া লেগে যায় প্রকৃতির নিয়মে বিষ ব্যাথাও থাকে না।
শাড়ীর জমিনে কোন গিট চলে না ক ও খ দুটো বই নিন ক-বই এর এক পৃষ্ঠার উপর খ-বইয়ের একটি পৃষ্ঠা রাখুন এভাবে দুটো বইয়ের পৃষ্ঠা সমাপ্ত করুন তারপর থলের ভিতর থেকে বেনা ও রশি দিয়ে দুই ধার বেঁধে টানুন ছিড়বেনা এটা বইয়ের একের পৃষ্ঠে অন্যের শক্তি মিলিত হওয়ার কারণে একটু পানি দিতে হয় তাঁতে সুতা ছিঁড়ে গেলে সুতার দুই মাথা ধরে আংগুলে একটু পানি নিয়ে দুই আঙ্গুলের প্যাঁচের মোচড়ে একটার সাথে আরেকটার জোড়া। তাঁতের পাশে পানি রাখা হয় বাটিতে।
নবাবগনের পর ১৭৮৭ সালে ত্রিশ লক্ষ টাকার ঢাকাই মসলিন কেবল ইংল্যান্ডেই রপ্তানি হয়েছিল।
মিরগড়ের তাঁতের শাড়ি ও কাপড় বিক্রি হতো তেঁতুলিয়া, ভজনপুর,তিরনই হাট,সালবাহান হাট,জগদল হাট, রাজনগর হাট,বোদা হাট, ময়দান দিঘির হাট,আটোয়ারি, ফুটকি বাড়ি ও পূর্বে সিমান্তের ওপারের জলপাইগুড়ির বিভিন্ন জায়গায়।
শতাব্দীর প্রাণরাঙা মিরগড়ের তাঁত শিল্পের জ্ঞান অভিজ্ঞ তাঁতির তাকিয়ে থাকার ঐতিহ্যের মূল্যায়নে azadqn@gmail.com পঞ্চগড়। ্্