International Worker's Day.May Day.
একটা সময় ছিল যখন 'মে-দিবস'কি সেটা বুঝানোর জন্য নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো তখন আমি কলেজের ছাত্র। কলেজে পড়তে পড়তে চাকরি হলো কিছুদিন করলাম একটা শিল্প কারখানায় তারপর বাদ দিলাম বাদ দিলাম নেতাদের সঙ্গও।
মে মাসের প্রথম দিন মে দিবস। এই দিনটিতে শ্রমিকরা কেবল নিজ দেশের নয়, দুনিয়ার সকলদেশের শ্রমিকদের প্রতিসৌহার্দ্য, ভাতৃত্ব,ও সংহতি প্রকাশ করে। মিছিল, সভা-সমাবেশে মিলিত কন্ঠে আওয়াজ তোলে 'দুনিয়ার মজদুর এক হও'। শ্রমিক শ্রেণীর কাছে মহান মে-দিবসটি হলো "আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস"।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই দিনটিকে সাধারণ ছুটির দিন হিসেবে সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত তা চালু আছে।
মে উৎসব শীতের দেশ ইউরোপের একটি প্রাচীন উৎসব ছিল। মে মাসের শুরুতে প্রকৃতি পাতায়, ফুলে, ফলে সেজে ওঠে। খ্রীষ্টের জন্মের আগে থেকেই ইউরোপে মে উৎসব পালনের রেওয়াজ ছিল। মে উৎসবে মেতে বৃক্ষ রোপন করা হতো। আনন্দ-উৎসব চলতো। কিন্তু ১৮৯০ সাল থেকে এই দিনটি আর ইউরোপ বাসীর উৎসবের দিন রইল না-নতুন অর্থ নতুন তাৎপর্য নিয়ে সারা দুনিয়ার শ্রমিক শ্রেণীর সংহতি প্রকাশের দিনে পরিণত হলো।তখন থেকেই মে-দিবস মানেই শ্রমিক দিবস।
১৭৫৮ সালে ম্যানচেস্টারে দাবি আদায়ের জন্যে তাঁতীদের ধর্মঘট কে প্রথম দিককার ধর্মঘট গুলোর অন্যতম বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
কল-কারখানার কাজ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারবেনা বলে শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মেশিন ভাঙ্গার, কারখানা বাড়িতে আগুন দেয়ার আন্দোলন শুরু করলো ইংল্যান্ডের শ্রমিক 'নেডলুড'এর নেতৃত্বে।
যা লুডাইট আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৭৬০ থেকে এই আন্দোলন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড সহ সারা ইউরোপ ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৮৩০ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলে।
১৮২৩ সালে আমেরিকার ইতিহাসে সর্বপ্রথম মহিলা দর্জি শ্রমিকরা সাধারণ ধর্মঘট করে।
এসময় ইউরোপের সকল দেশের কারখানা সমুহে সাধারণ ভাবে কাজের সময় ছিল চৌদ্দ ঘন্টা। ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন সাড়ে দশ ঘণ্টা কাজের সময় চালু করেন কিন্তু তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
ফ্রান্সের লিয়ন্স শহরে ১৮৩১ সালে লক আউট ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে তাঁতী শ্রমিকরা আওয়াজ তোলে-কাজ করে বাঁচতে দাও, নতুবা যুদ্ধ করে মরতে দাও।
১৮৩৩-১৮৩৭সাল পর্যন্ত আমেরিকায় মজূরী বৃদ্ধি ও দশ ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবিতে ধর্মঘট আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। এই আন্দোলনের ফলে শ্রমিকরা কোথাও কোথাও ১০ ঘন্টা শ্রম দিবসের দাবি আদায় করে নেন।
১৮৩৬ থেকে ১৮৪২ ইংরেজ শ্রমিকদের আন্দোলনকে অগ্রসর করে নেওয়ার জন্য 'জাতীয় চাটার সমিতি'গঠিত হয়। এই আন্দোলন অনেক ব্যাপক আন্দোলনের রুপ নেয়।
১৮৪৪ সালে জার্মানির সাইলেসীয় তাঁতীরা অমানুষিক শোষণ-নির্যাতন জর্জরিত হয়ে আন্দোলনের ডাক দেয় এবং সংঘর্ষে ১৭ জন নিহত ও ১৪জন আহত হন।
১৮৪৮ সালে মার্কস ও এঙ্গেলস' শৃঙ্খল ছাড়া সর্বহারাদের হারাবার কিছু নেই জয় করার জন্য আছে সারা জগৎ- দুনিয়ার মজদুর এক হও।
১৮৪৭-১৮৬০ এর মধ্যে ১০ ঘন্টা কর্ম দিবস আমেরিকায় আইনগত স্বীকৃতি পায়।
১৮৬৪ সালে মার্কস ও এঙ্গেলস 'শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিক সমিতি সমিতি গড়ে তোলেন লন্ডনে। এটাই শ্রমিক শ্রেণীর প্রথম আন্তর্জাতিক সংগঠন।
১৮৬৬ সালে আমেরিকার ঢালাই শ্রমিক নেতা সিলভিস এর নেতৃত্বে আট ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেন এবং কার্ল মার্কসের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিকের জেনেভা কংগ্রেসে উক্ত দাবির সমর্থনে প্রস্তাব পাশ হয়। আন্দোলনের ফলে আমেরিকার কিছু অংশে আট ঘণ্টা কর্মদিবস মেনে নেওয়া হয়। সিলভিসের মৃত্যুতে তা ম্লান হয়ে যায়।
১৮৭৫ সালে পেনসেলভানিয়া খনি শ্রমিকদের আন্দোলনে দশ জন ক্ষনি শ্রমিককে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝোলানো হয়।
১৮৮৪ থেকে ১৮৮৫ আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়। অনেক কল-কারখানার লক আউট ঘোষণা করা হয়। ফলে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। তখন অন্যান্য দাবি সহ আট ঘন্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন জোরদার হয়। সেই সময়ে 'আমেরিকা ফেডারেশন অব লেবার' একটি সংগঠন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
লেবার ফেডারেশনের ১৮৮৫ সালের সম্মেলনের সিদ্ধান্তে ১৮৮৬ সালের ১মে আট ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবিতে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়।
১৮৮৬ সালে ধর্মঘট ব্যাপক আকার ধারণ করে। শ্রমিকরা গেয়ে চললো আট ঘন্টার গান-
"রবির কিরণে, কুসুম- গন্ধে
ভরে নিতে চাই মনটা।
জানি, বিধাতারও তাই অভিলাষ,
চাই চাই আট ঘণ্টা।
কল-কারখানা বন্দর থেকে
বাজাই যে রণডংকা,
শ্রম,বিশ্রাম,আনন্দ- সবই
এক একটি আট ঘণ্টা।
শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলনের এই উত্তপ্ত অবস্থার পটভূমিতেই আমেরিকায় মে-দিবসের আবির্ভাব ঘটে।
০৮ ঘণ্টা কাজের দাবী আদায় করার পিছনে যে মূল চিন্তা ছিল তা হলো "০৮ ঘণ্টা কাজ,০৮ ঘন্টা বিশ্রাম,ও ০৮ ঘণ্টা আমোদ-প্রমোদ এবং পড়াশুনার ব্যাবস্থা করা।
তথ্যসুত্র-azadqn@gmail.com
To be conti...